
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
ভাদ্র মাসের শুরুতেই চারপাশে পাকা তালের মৌ মৌ গন্ধ। গ্রাম থেকে শহর— সর্বত্র চলছে তালের নানা পিঠা-পুলির উৎসব। তবে এর ভেতর সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ জাগাচ্ছে সুস্বাদু মৌসুমি খাবার তাল বড়া বা তালমন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় এখন তাল বড়ার বিক্রি জমজমাট। স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রতিকেজি তাল বড়া ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড়ে জমে উঠছে শহরের দোকানগুলো।
লাল বাজারে শান্ত সাহার তাল বড়া সবার শীর্ষে
আখাউড়ার পৌর শহরের লাল বাজার এলাকায় শান্ত সাহা নামের এক ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে মৌসুমি তাল বড়া বিক্রি করে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। প্রায় ৫০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন তিনি। অন্যান্য মিষ্টির পাশাপাশি তার দোকানের তাল বড়ার স্বাদ এতটাই আলাদা যে একবার খেলে বারবার ফিরে আসছেন ক্রেতারা।
শান্ত সাহা জানান, দৈনিক ৮০ থেকে ৯০ কেজি তাল বড়া বিক্রি হয়। সকাল ৮টা এবং বিকেল ৪টায় দুই ধাপে কারিগররা তাল বড়া তৈরি করেন। পাকা তালের রস, ময়দা, মাসকলাই, চালের গুঁড়া, চিনি ও তেল দিয়ে তৈরি করে গরম কড়াইয়ে ভেজে তারপর চিনির সিরায় ডুবিয়ে বিক্রি করা হয়। রাত ৯টা পর্যন্ত চলে এই বিক্রি।
পুষ্টিগুণে ভরপুর পাকা তাল
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, পাকা তালে প্রচুর ভিটামিন, জিঙ্ক, পটাশিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। তালের রস শ্লেষ্মানাশক হিসেবে পরিচিত। এছাড়া এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, শরীরে উদ্দীপনা জাগায় এবং সর্দি-কাশির মহৌষধ হিসেবে কাজ করে।
ক্রেতাদের অভিমত
স্থানীয় ক্রেতা মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, “তাল বড়ার স্বাদ মৌসুমি বলেই আলাদা। তাই পরিবারের জন্য এক কেজি কিনেছি।”
প্রবাসী মো. মনির হোসেন বলেন, “দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার কারণে তাল বড়া খাওয়া হয়নি। এবার বাজার করতে এসে খেয়ে দারুণ ভালো লেগেছে। পরিবারের জন্যও কিনেছি।”
গৃহিণী আসমা আক্তার বলেন, “বাড়িতে বানালেও বাজারের তাল বড়ার মতো স্বাদ মেলে না। গত বছরের তুলনায় দাম বেশি, তবুও কিনেছি।”
মো. আলম মিয়া জানান, “ছেলে-মেয়েরা তাল বড়া খেতে খুব পছন্দ করে। অতিথি আসায় এবার দুই কেজি কিনেছি।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী আলহাজ্ব বিল্লাল হোসেন বলেন, “এখানকার তাল বড়ার আলাদা সুনাম আছে। মৌসুম এলে প্রায়ই খাই এবং বাড়িতেও নিয়ে যাই।”
ঐতিহ্যের স্বাদে ভরপুর
পাকা তালের ঘ্রাণ আর গরম ভাজার কড়াই থেকে ভেসে আসা মিষ্টি সুবাসে মুখরিত আখাউড়ার বাজার। মৌসুমি এই তাল বড়া শুধু স্বাদের জন্য নয়, বরং লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবেও জায়গা করে নিয়েছে সবার মনে।