
আফসার হোসেন তূর্জা
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। এসব আবর্জনার স্তুপে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পৌরবাসীর জন্য। ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি জনস্বাস্থ্যের ওপরও নেমে এসেছে বড় ধরনের হুমকি।
শহরবাসীর দুর্ভোগের কথা চিন্তা না করে প্রতিদিন বাসাবাড়ি ও হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে সংগ্রহ করা ময়লা এভাবেই অবাধে ফেলে দিচ্ছেন পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা।
ভৈরব পৌরসভা ১৯৫৮ সালে পৌরসভা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং বর্তমানে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের বসবাস এ শহরে। অথচ প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য নেই কোনো নির্দিষ্ট জায়গা বা ডাম্পিং স্টেশন।
ফলে রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়ার একমাত্র ব্যস্ততম সড়কের পাশের রেলওয়ের একটি বড় পুকুরে প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে এসব ময়লা। ইতোমধ্যেই এলাকাটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
প্রতিদিন হাজারো যাত্রী ও পথচারী এই সড়ক দিয়ে রিকশা, অটোরিকশা ও সিএনজিতে যাতায়াত করেন। দুর্গন্ধে নাক-মুখ ঢেকে চলাচল করতে হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, এর কারণে অনেকেই ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

এই সড়কের পাশেই রয়েছে দি নর্থ সাউথ স্কুল। ময়লার দুর্গন্ধে ক্লাস নিতে পারছেন না শিক্ষকরা, সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
স্কুলের শিক্ষকরা বলেন, আমাদের স্কুল সংলগ্ন স্থানে ময়লা ফেলায় এমন দুর্গন্ধ ছড়ায় যে ঠিকমতো ক্লাস নেওয়া যায় না। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়ার সময় বমি করে। আমরা চাই দ্রুত এখানে ময়লা ফেলা বন্ধ করা হোক।
পথচারী আলামিন মিয়া বলেন, প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে রেলস্টেশনের যাত্রীসহ আমাদের চলাচল করতে হয়। এখানে এলেই নাক-মুখ চেপে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।

ট্রেনযাত্রী আব্দুস সালাম বলেন, ভৈরবের মানুষের রুচিবোধ থাকলে এমন ব্যস্ত সড়কের পাশে ময়লা ফেলে পরিবেশ নোংরা করতো না।”
আরেক যাত্রী কাউসার আহমেদ বলেন, এই ময়লার ভাগাড় ভৈরবের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। পৌর কর্তৃপক্ষের উচিত নির্জন স্থানে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করা।
রেলস্টেশন রোড এলাকার বাঁশ ব্যবসায়ী কাসেম মিয়া বলেন, আমি আগে পুকুরপাড়ে দোকান করতাম, কিন্তু ময়লা ফেলার কারণে পুকুরটি ভরাট হয়ে গেছে। এখন অন্য পাশে বসেছি, তবুও দুর্গন্ধে ব্যবসা করা যাচ্ছে না।
ভৈরব পৌরসভার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা রুকন উদ্দিন বলেন, পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে নির্দিষ্ট কোনো ডাম্পিং স্টেশন নেই। প্রতিদিন কয়েক টন ময়লা সরকারি খাস জায়গায় এনে ফেলতে হচ্ছে।
যত্রতত্র ময়লা ফেলার কারণে পরিবেশ দূষিত হবার কথা স্বীকার করে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক বলেন, সরকারি নীতিমালা ভিতরে থেকে ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য একটি ডাম্পিং স্টেশন ভৈরববাসীকে উপহার দিতে পারি, এই বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সেই সাথে আমরা আশা করছি অতি দ্রুত একটি সঠিক জায়গা নির্ধারণ করতে পারবো যাতে পৌরবাসী এই ময়লা আবর্জনার জন্য যে সমস্যা হচ্ছে তা সমাধান করতে পারবো।
ভৈরববাসীর দাবি—দ্রুততম সময়ে যেন একটি নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্টেশন গড়ে তোলা হয়, যাতে শহরের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে।